বিলিওনিয়ার ইলন মাস্কের টুইটার কেনার নাটকীয়তা নিয়ে প্রযুক্তির পৃথিবীতে শুরু হয়েছিলো এক বিতর্কের ঝড়। টুইটারের মতো অনলাইন সামাজিক মাধ্যমগুলোর মালিকানা কাদের হাতে থাকা উচিত? এককভাবে মাস্কের মতো ধনকুবেরদের হাতে, নাকি স্টক মার্কেটের মাধ্যমে পাবলিক শেয়ারহোল্ডারদের হাতে- যাতে তারা প্রতিষ্ঠানগুলোকে চাপের মুখে রাখতে পারে?
‘ইন্টারনেট অব দ্য পিপল’ বইয়ের লেখক বেন টার্নফ অবশ্য বিশ্বাস করেন যে এরচেয়ে আরো ভালো একটি উপায় আছে। টার্নফ তার বইয়ে ইন্টারনেটের ঐতিহাসিক রূপরেখায় দেখিয়েছেন, কিভাবে সরকার-পরিচালিত নেটওয়ার্ক হিসেবে শুরু করে অবশেষে ইন্টারনেটের মালিকানা চলে এসেছে প্রাইভেট কোম্পানিদের হাতে এবং এসবের মধ্যে জনগণের জন্য ভাবা হয়েছে খুবই কম। এই বইয়ে তিনি ইন্টানেটের তথাকথিত মালিকদের ক্ষমতা নিয়ন্ত্রনের জন্য অ্যান্টিট্রাস্ট নীতিমালা থেকে শুরু করে ইন্টারনেট অধিকারের জন্য প্রয়োজনীয় রাজনীতির বিষয়ে আলোচনা করেছেন। তিনি বিশ্বাস করেন সকলের জন্য একটি অবাধ, স্থানীয় এবং অবাণিজ্যিক ইন্টারনেট অত্যন্ত জরুরী। ২০২২ সালে টুইটার বিতর্ক চলাকালীন সময় লেখক বেন টার্নফের এই সাক্ষাৎকারটি নেন the verge পত্রিকার সিনিয়র টেক ও পলিসি এডিটর Adi Robertson. সাক্ষাৎকারটিকে বাংলায় রূপান্তর করেছেন আশরাফুল আলম প্রান্ত।
আমরা এখন বিলিয়নিয়ার ইলন মাস্ক কর্তৃক পাবলিক কোম্পানি টুইটারকে ক্রয় করে একটি ধনকুবের পরিচালিত প্রাইভেট কোম্পানিতে পরিণত হওয়ার নাটকীয়তায় বাস করছি। মনে হচ্ছে এই পাবলিক/ প্রাইভেট মালিকানাই আমাদের তথ্য পরিষেবাগুলো পরিচালনার দুটি মৌলিক মডেল হয়ে যাচ্ছে। আপনি কি মনে করেন যে, এই বিষয়টি সাধারণ লোকদের আপনার বইয়ে উত্থাপন করা ইস্যুগুলি সম্পর্কে আরও ভাবতে বাধ্য করছে?
আমি এমনটিই আশা করি। আমি মনে করি এই ঘটনা, আমরা যেই সাইবার স্পেসে নিজেদের কথোপকথন- বিশেষ করে রাজনৈতিক কথোপকথনগুলো করে থাকি- সেই স্পেসটির দুর্বলতা এবং সেটি ব্যক্তিগত দখল এবং নিয়ন্ত্রণে চলে যাওয়ার একটি প্রভাবশালী দৃষ্টান্ত উপস্থাপন করে। টুইটার, যেমনটি আপনি উল্লেখ করেছেন, আসলে একটি প্রাইভেট কোম্পানি যারা পাবলিক শেয়ার মার্কেটে ব্যবসা করতো। মাস্ক এটিকে ক্রয় করে নিজের একক ব্যক্তিগত প্রতিষ্ঠানে পরিণত করার মধ্য দিয়ে বিশ্বের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ সামাজিক নেটওয়ার্কগুলির একটিকে সম্পূর্ণ নিজের নিয়ন্ত্রণে আনার সম্ভাবনা সৃষ্টি করছেন। আমি জানি এটি কখনো কখনো বলা হয় যে, টুইটার আসলে বাস্তব জীবনের কিছু না এবং এটিই অবশ্যই সত্যি। কিন্তু এটি পলিসি নির্ণয় এবং সংস্কৃতির বিষয়-আশয়ে বেশ প্রভাব বিস্তারকারী হতে পারে। সংক্ষেপে বললে, আমি আশা করি আমার বইটি আমাদের কথোপকথনগুলি যে স্পেসগুলোতে সংঘটিত হয় সেগুলোর ব্যক্তিগত মালিকানায় পরিণত হওয়া নিয়ে কী কী ঝুঁকি রয়েছে সে সম্পর্কে একটি বিস্তৃত আলাপকে উদ্দীপিত করবে। তবে আমি নিশ্চিত নই যে এই ঝুঁকিগুলোকে আমি ইতোমধ্যেই কাজ করতে দেখেছি কিনা।
এসবের প্রতিক্রিয়ায় মাস্টোডনের (একটি ওপেন সোর্স সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম) নতুন ব্যবহারকারীর সংখ্যা বাড়তে দেখাটা বেশ আকর্ষনীয় ছিলো। তবে আমি ঠিক জানি না এই সংখ্যাবৃদ্ধি পরে কতখানি বজায় থেকেছে।
আমি মনে করি নানা ঘটনার প্রেক্ষিতে প্রায়ই মাস্টোডনের জনপ্রিয়তা বৃদ্ধি পায় এবং এটি বেশ দারুণ একটি ব্যাপার। আমি মনে করি নানা ঘটনার প্রেক্ষিতে প্রায়ই মাস্টোডনের জনপ্রিয়তা বৃদ্ধি পায় এবং এটি বেশ দারুণ একটি ব্যাপার। একটি ওপেন-সোর্স প্রজেক্ট চালানো এবং রক্ষণাবেক্ষণের ক্ষেত্রে হরেক ধরনের অসুবিধা রয়েছে। কিন্তু এতে করে লোকেরা একটি বিকল্প ব্যবস্থার সুযোগ পায় এবং যদি তারা সবাই স্থায়ীভাবে মাস্টোডনে স্থানান্তরিত নাও হয়, অন্তত তাদের কল্পনাকে প্রসারিত করাটা গঠনমূলক। ইন্টারনেটে যে যোগাযোগের বিভিন্ন মডেল রয়েছে এবং একসাথে অনলাইনে থাকার বিভিন্ন উপায় নিয়ে পরীক্ষা-নিরীক্ষা করা কম্যুনিটিদের বিষয়ে বাকিদের জানতে পারাটা একটি ইতিবাচক পদক্ষেপ। এটি হয়তো যথেষ্ট নয়, তবে আমি মনে করি এটি একটি প্রয়োজনীয় বিষয়।
আপনার বইতে এমন অনেক কিছুর উল্লেখ আছে যা নিয়ে বেশ কিছু সময় ধরেই কথা হচ্ছে। যেমন ধরুন মাস্টোডনের মতো কম্যুনিটি অথবা স্থানীয় ব্রডব্যান্ড নেটওয়ার্কের উদ্দ্যোগগুলো- কিন্তু সেগুলো কখনই মূলধারায় প্রবেশ করেনি। আমি জানতে আগ্রহী যে, আপনি কি মনে করেন এই প্রচেষ্টাগুলোতে রিসোর্সের অভাব রয়েছে অথবা প্রযুক্তিগত জটিলতা আছে নাকি এরা কখনই ব্যাপকভাবে মূলধারার অংশ হতে পারবে না।
আমি মনে করি মূল সমস্যাটা হলো যে, এই বিকল্পগুলো অধিকাংশ সময় খুব নিদির্ষ্ট এবং প্রযুক্তিগতভাবে পারদর্শী ব্যবহারকারীদের আকর্ষিত করে। এই ধরনের বিকল্প মাধ্যমগুলোর পক্ষে উল্লেখযোগ্য পাবলিক ইনভেস্টমেন্ট ছাড়া সত্যিকার অর্থে মূলধারায় পরিণত হওয়া কঠিন। এবং এর জন্য একটি বৃহত্তর রাজনৈতিক আন্দোলন প্রয়োজন, যাতে করে কেনো এই মাধ্যমগুলো ব্যবহার করা দরকারি সেটি স্পষ্ট হবে। তাই আমি এইসব বিকল্প স্পেসগুলোকে দারুণ অনুপ্রেরণামূলক এবং সৃজনশীল প্রযুক্তিগত পরীক্ষা নিরীক্ষা মনে করি। কিন্তু আমরা জানতে পেরেছি যে, সৃজনশীল প্রযুক্তিগত পরীক্ষা নিরীক্ষাগুলো একটি আমূল পরিবর্তনের জন্য যথেষ্ট নয়। এটা অবশ্যই গুরুত্বপূর্ণ, কিন্তু আমাদের দরকার রাজনীতি। আমাদের দরকার পাবলিক পলিসি। দরকার সামাজিক আন্দোলনের। শুধুমাত্র কোডবেস থেকে যা যা পাওয়া যায় না, আমাদের এখানে তা সব প্রয়োজন।
আপনি ফেসবুকের মতো সাইটগুলোর বিশাল আকৃতি কিভাবে একটি সমস্যা তা নিয়ে কথা বলেন — মানে আমরা শুধুমাত্র পাবলিক ফান্ডের টাকায় ফেসবুকের একটি ভিন্ন সংস্করণ তৈরি করেই আশা করতে পারি না যে সব ঠিকঠাক হয়ে যাবে। কারণ এই বিপুল ব্যবহারকারীদের একটি সুস্পষ্ট বিকল্প না দেখিয়ে অন্য কোথাও নেয়াটাও কঠিন। কিভাবে এর সমাধান করা যায় বলে আপনি মনে করেন?
আমার মতে, বর্তমান ফেসবুকের বদলে একটি বিকেন্দ্রিক ফেসবুক, বা একক মালিকানার বিকল্প হিসেবে সমন্বিত মালিকানার একটি টুইটার এখানে মূখ্য বিষয় না। যদিও আমি মনে করি অপেক্ষাকৃত একটি ভালো ইন্টারনেট কল্পনার পথে এগুলো গঠনমূলক প্রথম পদক্ষেপ হতে পারে। কিন্তু আমাদের এটিও মনে রাখতে হবে যে, আধুনিক এই প্ল্যাটফর্মগুলো সৃষ্টির সময়ই এর কাঠামো নির্মাতারা প্রণোদনা লাভের বিষয়টি মাথায় রেখেছিলেন। এবং ব্যবহারকারীদের আচরণ সুনিদির্ষ্টভাবে নিয়ন্ত্রণ করতেই এই কাঠামোগুলো বিকশিত হয়েছে যাতে সর্বোচ্চ মুনাফা অর্জন সাধিত হয়। কেবল একটু অন্যভাবে নতুন প্ল্যাটফর্মগুলোকে সাজিয়েই আমরা উল্লেখযোগ্যভাবে কোনো আলাদা ফলাফল আশা করতে পারি না।
আমাদের ইন্টারনেটে এমন একটি সহজ সরল জায়গা তৈরী করতে হবে, যেখানে প্রযুক্তির খুঁটিনাটি সম্পর্কে অজ্ঞাত সাধারণ মানুষেরা এসে প্রযুক্তিগত দক্ষতা এবং রিসোর্সের সাহায্য নিয়ে তাদের দৈনন্দিন কাজে আসার মতো অনলাইন স্পেসগুলো তৈরী করে নিতে পারবে। হ্যা, আমি জানি, কথাটা একটু ইউটোপিয়ান শোনায়। কিন্তু এ বিষয়ে একটা দারুণ উদাহরণ আছে। ১৯৮০র দশকের লন্ডনে লেবার পার্টির নেতৃত্বে স্থানীয় সরকার আমাদের আজকের দিনের মেকারস্পেস বা হ্যাকারস্পেসের মতো অনেকগুলো সাইবার স্পেস চালু করেছিলো, যার পেছনে আকাঙ্খা ছিলো প্রযুক্তির নকশা এবং বিকাশকে গণতান্ত্রিক করা। তাই এখানে আমার অনেকটুকু আশা আছে। আগামীতে মানুষের সৃজনশীলতাকে যদি আমরা আসলেও একটি বড় পর্যায়ে উন্নীত করতে পারি, তাহলে সৃষ্টি হওয়া নতুন অনলাইন বিশ্বটি কেমন হবে?
মনে হয় মূল ব্যপারটা আদতে এমন না যে, মানুষ এই স্পেসগুলো ডেভেলপ করতে পারেনা; বরং তারা নতুন একটি অনলাইন স্পেস খোঁজার জন্য এত সময় ব্যয় করতে চাননা- যেটা মূলত তাদের জন্মদিনের পার্টিতে অন্যদের নিমন্ত্রণ জানাবার স্বীকৃত একটি পদ্ধতি। এক্ষেত্রে তারা ফেসবুকই চান কারণ এটা ব্যবহার করা সহজ।
এক্ষেত্রে আমি এভাবে ভাবি: ফেসবুক ব্যবহারের ঝুঁকি সম্পর্কে বোঝানোর পাশাপাশি সাধারণ জনগণকে আকৃষ্ট করার করার মতো করে আমরা নতুন প্রযুক্তিগুলো কীভাবে তৈরি করতে পারি? আর এখানেই রাজনীতি ভূমিকা রাখতে পারে বলে আমার মনে হয়। এর দ্বারা জন-বিনিয়োগের মাধ্যমে সৃষ্ট বিকল্প প্ল্যাটফর্মগুলোতে অপেক্ষাকৃত ভালো ইউজার ইন্টারফেস দেয়া সম্ভব, যেটি বেশ গুরুত্বপূর্ণ। এবং প্রযুক্তি বিশারদ নয় এমন ফেসবুক ব্যবহারকারীদের কাছে পরিষ্কার করে তুলে ধরা সম্ভব যে: দেখুন আপনাদের এই প্ল্যাটফর্ম ব্যবহারের ফলাফল কি, বিশ্বে এই প্ল্যাটফর্ম কী অবদান রাখছে আর আপনার দৈনন্দিন জীবন সম্পর্কে কী কী রেকর্ড করছে। এই ব্যাপারে মানুষের সচেতনতা গত কয়েক বছরে এমনই উল্লেখযোগ্যভাবে বেড়েছে যে, অনেকেই একারণে ফেসবুক ছাড়ছেন। কিন্তু আমার মনে হয় এই আলাপে রাজনীতি আর প্রযুক্তি উভয় অংশীদারের অংশগ্রহণ দরকার।
দারিয়াস কাজেমির একটি আইডিয়া আপনি আপনার বইতে উল্লেখ করেছিলেন যে কীভাবে লাইব্রেরিগুলো স্থানীয় সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম পরিচালনা করতে পারে।
দারিয়াসের আইডিয়াটা এমন যে: যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিটি লাইব্রেরির বেজমেন্টে যদি একটি করে সোশ্যাল মিডিয়া সার্ভার থাকে এবং যদি সবগুলোকে মাস্টোডনের মতো একটি প্রকল্পের মাধমে সাজানো হয়, তাহলে কেমন হবে? আমি এই মডেলটি অনেকগুলো কারণে পছন্দ করি। তার মধ্যে সবকিছুর উপরে সম্ভবত এটি যে, এখানে স্বেচ্ছায় একটি সরাসরি পরিচিত স্পেস তৈরী করার সম্ভাবনা আছে, যার মাধ্যমে কন্টেন্ট মডারেশন সম্পর্কিত অনেক জটিল বিষয়গুলো স্থানীয় গণতান্ত্রিক ব্যবস্থার মাধ্যমে সমাধান করা সম্ভব হবে।
আমাদের একে অপরের সাথে কেমন আচরণ করা উচিত এসম্পর্কিত মূল্যবোধগুলোর ক্ষেত্রে মডারেশনের বেশ গভীর তাৎপর্য আছে। আমার মতে, মূল্যবোধ নিয়ে সাংঘর্ষিক এই ব্যপারগুলো কেবল গণতান্ত্রিক ব্যবস্থায় পরিচালিত স্পেসেই সামনে আনা সম্ভব, আর এই স্পেসগুলো সবচেয়ে ভালো কাজ করে যখন তারা ছোট থাকে। আমি বইটায় স্থানীয় কম্যুনিটি তৈরীতে বাড়াবাড়ি করার বিরুদ্ধেও সাবধান করার চেষ্টা করেছি, কারণ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রেরই স্থানীয় নিয়ন্ত্রণের একটি বর্ণবাদী ইতিহাস আছে। আর ইন্টারনেটের ক্ষেত্রে তো আমরা এমনিতেই হুট করে স্থানীয় হতে পারিনা, কারণ ইন্টারনেট স্থানীয় কোনো জিনিস না। তবে ইন্টারনেট স্থানীয় না হলেও এর আঞ্চলিক এবং জাতীয় গুরুত্ব আছে। তাই ইন্টারনেটে স্থানীয় স্বশাসন প্রতিষ্ঠিত হলে একটি চমৎকার যোগাযোগ সম্পর্ক গড়ে উঠতে পারে।
আপনার কি মনে হয় যে এমনভাবে ছোট কমিউনিটিগুলোকে সংগঠিত করার উপায় আছে, যাতে তাদের মধ্যে কিছুটা স্ব-শাসন থাকবে কিন্তু কোনো ভৌগলিক সীমানা থাকবে না?
হ্যাঁ। এখানে একটি সম্ভাব্য আপত্তি হতে পারে যে: ইন্টারনেট আর কম্পিউটার নেটওয়ার্কিং এর পুরো সার্থকতাই কি আরও বড় পরিসর, এবং স্থানভিত্তিক হবেনা- এমন সম্পর্ক গড়ে তোলা নয় কি? নব্বইয়ের দশকে একজন শিশু হিসেবে ইন্টারনেট আবিষ্কারের পর এতে আমার পছন্দের ব্যপার ছিলো যে এটি আমার স্থানীয় কমিউনিটিভিত্তিক ছিলোনা, বরং এর মাধ্যমে আমি সব জায়গার মানুষের সাথে কথা বলতে পারবো। কিন্তু স্থানীয় কাঠামো থাকার আকর্ষণীয় দিক হচ্ছে যে, কোনো নির্দিষ্ট বিষয়ে করণীয় নিয়ে আমি দুই-তিন ডজন মানুষকে একটা কক্ষে এনে তাদের মাঝে বিতর্ক, আলোচনা এবং তর্ক করতে দিতে পারবো। নিজেরা নিজেরা এবং ছোট কাঠামোতে এই ধরণের গণতান্ত্রিক সিদ্ধান্ত নেবার মতো বিষয়গুলো সবচেয়ে ভালো কাজ করে।
আপনার কথায় যুক্তি আছে। আর আপনি সঠিক বলেছেন: ইন্টারনেটের একটি মজার জিনিস ছিলো যে আপনি যেখানে থাকেন বা যেখানে জন্মগ্রহণ করেছেন, সেখানে আপনাকে আবদ্ধ থাকতে হয়নি।
আমি মনে করি, আমরা এমন একটি পরিস্থিতিতে আছি যেখানে মানুষের অনেক অনলাইন সম্পৃক্ততা আছে, কিন্তু খুব একটা সরাসরি সম্পৃক্ততা নেই। ব্যাপারটা কেমন যেন সামঞ্জস্যহীন। আমেরিকান একটা শহরে আপনার প্রতিবেশিদের না চিনে, আশেপাশের কমিউনিটির কাউকে না চিনে এমনকি সহকর্মীদের সাথে কোনো সম্পর্ক না রেখে, শুধুমাত্র ইন্টারনেটের মাধ্যমে সম্পূর্ণ অচেনা মানুষদের সাথে সামাজিক জীবন কাটানো কিন্তু বেশ সহজ।
আমি নীতিবান হয়ে বলতে যাবোনা যে এটা খারাপ- আমি মনে করি মানুষ তাদের সুবিধামতো ব্যবস্থা সাজিয়ে নেয়। কিন্তু আমার মনে হয় এখানে অপেক্ষাকৃত বেশি ভারসাম্যপূর্ণ ব্যবস্থা তৈরীর জন্য কথা বলা দরকার, যেখানে মানুষ সরাসরি, স্থানভিত্তিক ও কর্মক্ষেত্রভিত্তিক সম্পর্কগুলোকে পুনরুদ্ধার করতে পারবে।
আপনি ইন্টারনেট ব্যক্তিগতকরণের ইতিহাসে এমন মুহূর্তগুলোর দিকে নির্দেশ করেন, যেখানে “Public lane in the information superhighway” এর মতো দারুণ প্রস্তাবনাগুলো ছিলো। আপনার কতোখানি মনে হয় যে এই পথগুলোর যেকোনো একটি অনুসরণ করা হলে সেটি আজকের ইন্টারনেটের ধারণা বদলে দিতো?
আমি নিশ্চিতভাবে বলতে পারছিনা যে এগুলো আধুনিক ইন্টারনেটের জঘন্য অপব্যবহারগুলো রোধ করতো, কিন্তু আমি মনে করি এর সবগুলোই ইন্টারনেটের ভবিষ্যত বদলে দিতো।
প্রথম থেকেই ইন্টারনেটকে ব্যক্তিমালিকানাধীন করাটা মূল পরিকল্পনা ছিলো। যুক্তরাষ্ট্রীয় সরকার অনির্দিষ্টকালের জন্য ইন্টারনেট নিজেরা চালাতে চায়নি। তারা জানতো যে ইন্টারনেট ব্যক্তিমালিকানার অধীনে আসবে। কিন্তু আপনি যেমনটা বললেন, সরকারের কাছে এই নতুন প্রাইভেট নেটওয়ার্কে বিভিন্ন ধরণের গণপদচারণার জন্য বেশ কিছু প্রস্তাবনা ছিলো। আর এই প্রস্তাবনাগুলো প্রাইভেট সেক্টরের কাছে হেরে গিয়েছে। তারা ইন্টারনেটের ভৌত অবকাঠামোর ওপর একচেটিয়া একটি করপোরেট একনায়কত্ব প্রতিষ্ঠা করেছে। তাই ইতিহাসের সেসকল মুহূর্তগুলো ভিন্ন পথে গেলেও, ইন্টারনেটের ব্যক্তিমালিকানাধীন হয়ে যাওয়ার বিরোধীতা করতো না। তবে তারা থাকলে সহনীয় পর্যায়ের ব্যক্তিমালিকানা উৎপন্ন হতো, যা বর্তমান ইন্টারনেটের বিকল্প হিসেবে বেশ গঠনমূলক একটি বিষয় হতো যেখানে আমরা আরো স্বাধীনতা পেতাম।
আবার যদি শুরু থেকে শুরু করি: ইলন মাস্কের টুইটারের ওপর কর্তৃত্ব নিয়ে আমরা কথা বলেছি। আপনার কাছে এর আদর্শ বিকল্প কোনটি? এমন বিকল্প থাকতে পারে যেখানে ইলন মাস্ক টুইটার নিয়ন্ত্রণ করেননা বরং সরকার টুইটার কন্ট্রোল করছে। অথবা এমন একটি বিশ্ব বিকল্প হিসেবে থাকে, যেখানে টুইটারের মতো এত বড় অথবা শক্তিশালী কোনো প্ল্যাটফর্মই নেই। কোন ব্যবস্থাটি সমাজের জন্য সবচেয়ে ভালো হবে আপনি মনে করেন?
এখানে সবকিছুর উপরে আমি যা দেখতে চাইবো সেটি হচ্ছে, এমন একটি ইন্টারনেট যেটি সত্যিকার অর্থে তার ব্যবহারকারীদের জন্য পরিকল্পিত, বিকশিত, বাস্তবায়িত এবং নিয়ন্ত্রিত একটি জায়গা। এটিই আমার আশার আলো। আমার মনে হয় এটি বহুকেন্দ্রিক এক ইন্টারনেটকে নির্দেশ করে, যা আরো বেশি বৈচিত্র্যপূর্ণ। এটি এমন একটি ইন্টারনেট যেটি আমাদের অনলাইন জীবনের বৈচিত্র্য আর জটিলতাগুলোকে তুলে ধরবে, যা ধীরে ধীরে হয়তো কমবে। আমাদের আজকের আলোচনার কিছু বিষয় এই দিকের প্রতিই ছোট অথবা বড় পদক্ষেপ। সর্বোপরি আমি মনে করি এটা হবে এমন একটা ইন্টারনেট, যেটা হবে জনগণের জন্য- কারণ এই ইন্টারনেটে তারা তাদের অনলাইন জীবনে সবচেয়ে প্রভাব বিস্তারকারী গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্তগুলো নেয়ার ক্ষেত্রে সরাসরি অংশগ্রহণ করতে পারবে।