ছবি: করিম আব্দুল্লাহ, AFP

ডিজিটাল যুগে গণহত্যা: সামাজিক মাধ্যম কোম্পানিগুলো কী ভূমিকা পালন করে?

আইসিজে'র মামলায় সংঘাতের সময় নৃশংসতার ক্ষেত্রে প্রযুক্তি কোম্পানিগুলোর ভূমিকা উঠে এসেছে। সহিংসতা এবং গণহত্যার বয়ান প্রতিরোধে অবশ্যই তাদের জবাবদিহি করতে হবে।

২০২৪ এর ২৬ জানুয়ারিতে গাজার ফিলিস্তিনি জনগণের উপর ইসরায়েলের গণহত্যার ঘটনার সম্ভাবনা নির্ধারণ করতে দক্ষিন আফ্রিকার করা মামলায় আন্তর্জাতিক বিচার আদালত (আইসিজে) অন্তর্বর্তীকালীন পদক্ষেপ গ্রহণের নির্দেশ দিয়েছে। অন্যান্য পদক্ষেপের মধ্যে, আদালত ইসরায়েলকে তার ক্ষমতার মধ্যে গণহত্যার উদ্দেশ্যে দেয়া প্রত্যক্ষ ও সাধারণ উস্কানির বিরুদ্ধে সকল কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ করার নির্দেশ দিয়েছে, যা ১৯৪৮ সালের জাতিসংঘ সাধারণ অধিবেশনে গৃহীত প্রথম মানবাধিকার চুক্তি জেনোসাইড কনভেনশনের অধীনে একটি অসম্পূর্ণ/আংশিক/অসমাপ্ত এবং শাস্তিযোগ্য অপরাধ। এছাড়াও, ইসরায়েলকে গাজায় সংঘটিত গণহত্যামূলক কর্মকান্ডের সাথে সম্পর্কিত প্রমাণাদি সংরক্ষণ ও ধ্বংস প্রতিরোধে ব্যবস্থা নিতেও নির্দেশ দেয়া হয়। 

আদালতের কক্ষে ইসরায়েলি কর্মকর্তার অনলাইনে দেয়া গণহত্যামূলক বক্তব্য উদ্ধৃত করা থেকে শুরু করে ইসরায়েল প্রতিরক্ষা বাহিনী (আইডিএফ) সৈন্যদের সামাজিক মাধ্যমের ভিডিও পর্যন্ত, আইসিজের মামলাটি সামাজিক মাধ্যম প্লাটফর্ম ও নৃশংস অপরাধের উপর গুরুত্বপূর্ণ আলোকপাত করে। এটির বহিঃপ্রকাশ ঘটেছে দক্ষিণ আফ্রিকার একজন আইনজীবী ব্লিনে নি ঘ্রালাইঘের শীতল কথায়– যেখানে তিনি বলছেন “ফিলিস্তিনি জনগণের বিরুদ্ধে গণহত্যার ভয়াবহতা গাজা থেকে আমাদের মোবাইল ফোন, কম্পিউটার এবং টেলিভিশন পর্দায় সরাসরি সম্প্রচারিত হচ্ছে – এটি ইতিহাসের প্রথম গণহত্যা যেখানে এর শিকাররা তাদের নিজস্ব ধ্বংস চলমান সময়ে সম্প্রচার করার” ব্যাপারে ।  কিন্তু সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণভাবে, মামলাটি টেক কোম্পানিগুলোর ভূমিকা, দায়িত্ব বা এমনকি দুষ্কর্মে সহায়তা অথবা অংশগ্রহণ সম্পর্কে গুরুতর প্রশ্ন উত্থাপন করে – আইনী এবং অ-আইনি উভয় ক্ষেত্রে – যখন তাদের পরিষেবাগুলো সহিংসতা এবং গণহত্যার উস্কানি ছড়ানোর জন্য প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে ব্যবহার করা হয়।

অক্টোবর ৭, ২০২৩ এর পর থেকে, গভীর উদ্বেগকারী অমানবিক বক্তৃতা, গণহত্যামূলক বক্তৃতা, এবং ইসরায়েলি কর্মকর্তা এবং বিখ্যাত ব্যক্তিদের দ্বারা ফিলিস্তিনিদের বিরুদ্ধে সহিংসতার প্ররোচনা অনলাইনে প্রকাশ পেয়েছে/ বিস্ফোরিত হয়েছে। আইসিজে উদ্ধৃত করে ইসরায়েলের প্রেসিডেন্ট আইজ্যাক হারযোগ, ইসরায়েলি প্রতিরক্ষা মন্ত্রী ইয়োয়াভ গ্যালান্তের বক্তব্য এবং এক্সে শেয়ার তৎকালীন শক্তি ও অবকাঠামো মন্ত্রী ইসরায়েল কেজের শেয়ার করা একটি পোস্ট, যেখানে লেখা: “সীমা অতিক্রম করা হয়েছে। আমরা জঙ্গি সংগঠন হামাসের সাথে লড়বো এবং তাদের ধ্বংস করবো। গাজার সকল বেসামরিক জনগণকে অবিলম্বে স্থান ত্যাগ করতে নির্দেশ করা হয়েছে। আমরা জিতবো। তারা এক ফোঁটা পানি অথবা একটি ব্যাটারিও তারা পাবে না যতক্ষণ না তারা পৃথিবী থেকে বিদায় হয়।”

অন্যান্য ইসরায়েলি কর্মকর্তা এবং রাজনীতিবিদরা সোশ্যাল যোগাযোগ মাধ্যমে অসংখ্য অনুরূপ বিবৃতি দিয়েছেন। উদাহরণস্বরূপ, নেসেটের ডেপুটি স্পিকার এক্স (সাবেক টুইটার)-এ গাজাকে সম্পূর্ণভাবে ধ্বংসের আহ্বান জানায়: “গাজাকে মুছে ফেল। এছাড়া অন্য কিছু আমাদেরকে সন্তুষ্ট করবে না। ইসরায়েলের ঠিক পাশেই একটা জঙ্গি সরকার কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য না। একটি শিশুকেও ছাড়বে না, শেষ পর্যন্ত অবশিষ্ট সকলকে বের করে দাও, যাতে তাদের পুনরুত্থান না হয়।” অলাভজনক সংস্থা দ্য ল অফ প্যালেস্টাইন বিভিন্ন ইসরায়েলি কর্মকর্তা এবং বিখ্যাতজনের দ্বারা ৫০০-টিরও বেশি অত্যন্ত উদ্বেগজনক গণহত্যামূলক বিবৃতি সংগ্রহ করেছে, এমনকি আদালত ইসরায়েলকে এই অপরাধ প্রতিরোধ ও শাস্তি দেওয়ার নির্দেশ দেওয়ার পরেও।

প্ল্যাটফর্মের জবাবদিহিতা এবং সশস্ত্র সংঘাত

জেনোসাইড কনভেনশনের অধীনে এই দায়িত্ব প্রাথমিকভাবে রাষ্ট্রকেই বহন করতে হয়, সামাজিক মাধ্যম কোম্পানিগুলোকেও অবশ্যই দায় নিতে হবে। জাতিসংঘের ব্যবসা এবং মানবাধিকার নির্দেশিকা নীতি (ইউএনজিপিস) এটি পরিষ্কার করে দিয়েছে যে কোম্পানিগুলোকে অবশ্যই মানবাধিকারকে সম্মান করতে হবে, ক্ষতি চিহ্নিত ও প্রশমন করতে হবে এবং যেখানেই তারা পরিচালিত হবে সেখানে অপব্যবহার প্রতিকার করতে হবে। সশস্ত্র সংঘাতের পরিস্থিতিতে এই ধরনের দায়িত্বগুলো বিশেষভাবে বৃদ্ধি পায়, কারণ কোম্পানিগুলো “অন্যান্য কর্তাদের দ্বারা সংঘটিত স্পষ্ট মানবাধিকার লঙ্ঘনের সাথে জড়িত” হওয়ার ঝুঁকি নেয়। এমনকি ইউএনজিপিসের নির্দেশিকা নীতি ২৩ ব্যবসায়গুলোকে সুপারিশ করে এই ঝুঁকিগুলোকে একটি আইনি সম্মতির বিষয় হিসেবে দেখতে, এবং, অতএব, এই অপরাধ বা অপব্যবহার ঘটানো, অবদান রাখা বা সরাসরি যুক্ত হওয়া এড়াতে এবং প্রশমন করতে সতর্কতার সাথে একটি স্বাভাবিকের চেয়ে উন্নত/ উন্নতর মানবাধিকার চর্চা করা উচিত। গণহত্যার সম্ভাব্য ঝুঁকি ছাড়াও, একটি অপরাধ যা যুদ্ধের সময় বা শান্তিতে সংঘটিত হতে পারে, কোম্পানিগুলোকে সশস্ত্র সংঘাত এবং সামরিক দখলের প্রসঙ্গে আন্তর্জাতিক মানবিক আইনের অন্যান্য লঙ্ঘনের জন্য জবাবদিহি করা উচিত।

ব্যবসায়গুলো কিভাবে সতর্কতার সাথে এমন উন্নতর চর্চা করবে তার কোনো একক ফরমেট নেই, তবে কিছু নির্দেশনা রয়েছে। উদাহরণস্বরূপ, সংঘাত-আক্রান্ত প্রেক্ষাপটে ব্যবসায়ের সতর্কতার সাথে উন্নতর মানবাধিকার চর্চার পথ প্রদর্শনের জন্যে জাতিসংঘের উন্নয়ন কর্মসূচি (ইউএনডিপি) “বিপদজনক চিহ্নের” একটি তালিকা দিয়েছে যা কোম্পানিগুলোকে দ্বন্দ্বের উপর তাদের প্রভাবের উপর আত্মবিশ্লেষণ এবং প্রত্যাশিত ক্ষতিগুলো হ্রাস করতে এই জাতীয় মূল্যায়ন পরিচালনা করার ব্যাপারে উৎসাহিত করবে। এসবের মধ্যে রয়েছে আন্তর্জাতিক মানবাধিকার ও/বা মানবিক আইনের গুরুতর লঙ্ঘন, ক্রমবর্ধমান জ্বালাময়ী/উত্তেজনা সৃষ্টিকারী বক্তৃতাবাজি বা, কোন নির্দিষ্ট গোষ্ঠী বা ব্যক্তিকে লক্ষ্য করে ঘৃণা বক্তব্য, যোগাযোগ মাধ্যমের উপর কড়া নিয়ন্ত্রণ বা নিষেধাজ্ঞা, তথ্য বিকৃতি, সেন্সরশিপ, প্রপাগান্ডা ও/বা অপতথ্যে প্রচার এবং ইন্টারনেট বা ওয়েবসাইট বন্ধ করে দেয়া।

গাজার উপর ইসরায়েলের নৃশংস যুদ্ধ শুরুর পর থেকে টেক কোম্পানিগুলোর জন্যে বিপদজনক চিহ্নের কোন সংকট হয়নি। ১৬ নভেম্বর ২০২৩-এ, আইসিজের নির্দেশে ৩৭ জন জাতিসংঘ মানবাধিকার বিশেষজ্ঞের দেয়া বিবৃতির বিষয়েও উল্লেখ করে “ইসরায়েলি সরকারের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের পাশাপাশি কিছু পেশাদার গোষ্ঠী এবং বিখ্যাত ব্যক্তিদের কাছ থেকে স্পষ্টভাবে গণহত্যামূলক এবং অমানবিক বক্তব্য আসা, যা গাজার ‘সম্পূর্ণ ধ্বংস’ এবং ‘মুছে ফেলার’ আহ্বান জানানোর” ব্যাপারে উদ্বেগ জানায়। এই বিশেষজ্ঞদের মধ্যে মানবাধিকার ও বহুজাতিক কর্পোরেশন ইস্যুতে কাজ করে এমন ওয়ার্কিং গ্রুপও/কার্যকরী গোষ্ঠীও অন্তর্ভুক্ত ছিল। সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য বিষয় হলো, গাজায় গণহত্যার ঝুঁকির বিরুদ্ধে জাতিসংঘের বিশেষজ্ঞদের সতর্কতা শুধুমাত্র সর্বপ্রথম ও সর্বাগ্রে দায়িত্ব বহনকারী রাষ্ট্রগুলোর দিকেই নির্দেশিত ছিল না, সাথে বেসরকারী/প্রাইভেট ব্যবসায়গুলোকেও নির্দেশ করা হয়েছিল “ফিলিস্তিনি জনগণের উপর গণহত্যার ঝুঁকি অবিলম্বে অবসান করার জন্য [তারা] যা করতে পারে তা তাদের করতে হবে।”

একইভাবে, জাতিসংঘের জাতিগত বৈষম্য দূরীকরণ কমিটি ২১ ডিসেম্বর ২০২৩-এ তার প্রাথমিক সতর্কীকরণ এবং জরুরি পদক্ষেপের প্রক্রিয়ার অধীনে একটি সিদ্ধান্ত জারি করেছে, যাতে “বর্ণবাদী ঘৃণামূলক বক্তব্য, সহিংসতার উসকানি এবং গণহত্যামূলক কর্মকাণ্ডের পাশাপাশি ৭ অক্টোবর ২০২৩-এর পর থেকে ফিলিস্তিনিদের উদ্দেশ্য করে দেওয়া ইসরায়েলি ঊর্দ্ধতন সরকারি কর্মকর্তা, সংসদ সদস্য, রাজনীতিবিদ এবং বিখ্যাতজনদের অমানবিক বক্তৃতাবাজির” ব্যাপারে সতর্ক করা হয়েছে। এরই সাথে অনলাইনে রাষ্ট্রীয় পৃষ্ঠপোষকতায় অপতথ্য সয়লাভ করা এবং গাজায় চলমান যোগাযোগ ব্যবস্থা দমনের কথা না বললেই নয়।

সবচেয়ে ধ্বংসাত্মক বোমা অভিযান

তবুও, আধুনিক ইতিহাসে মৃত্যু এবং ব্যাপক ধ্বংসের মাত্রা যখন নজিরবিহীন, তখন টেক কোম্পানিগুলোর জন্য এই চলমান নৃশংসতার মধ্যে তাদের নিজেদের ঝুঁকি এবং অপরাধ মূল্যায়নের জন্য সতর্ক করার প্রয়োজন হওয়া উচিত না। বিশেষজ্ঞদের মতে, যুদ্ধের প্রথম দুই মাসে গাজা উপত্যকায় চালানো ইসরায়েলের ধ্বংসযজ্ঞ ২০২২ সালে ইউক্রেনের মারিউপোল, ২০১২-২০১৬ সালে সিরিয়ার আলেপ্পো, এমনকি দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে জার্মানির মিত্রবাহিনীর চালানো বোমাবর্ষণকেও হার মানায়। ৪ মার্চ ২০২৪ পর্যন্ত, ৭ অক্টোবর ২০২৩ এর পর থেকে গাজায় কমপক্ষে ৩০,৫৩৪ ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছে এবং ৭১,৯২০ ফিলিস্তিনি আহত হয়েছে। যুদ্ধের শুধুমাত্র প্রথম তিন সপ্তাহে নিহত ফিলিস্তিনি শিশুদের সংখ্যা ২০১৯ সালের পর থেকে বিশ্বজুড়ে সশস্ত্র সংঘাতে নিহত অন্যান্য শিশুদের মোট সংখ্যাকে ছাড়িয়ে গেছে। জনসংখ্যার ৮০ শতাংশেরও বেশি – ১৯ লক্ষ ফিলিস্তিনি – খাদ্য, ওষুধ, পানি বা নিরাপদ আশ্রয় ছাড়াই অভ্যন্তরীণভাবে বাস্তুচ্যুত হয়েছে। ইসরায়েলের এই যুদ্ধ অন্য যেকোনো সংঘাতের চেয়ে বেশি ফিলিস্তিনি সাংবাদিককে হত্যা করেছে। একই কথা বলা যায় জাতিসংঘ কর্মীদের হত্যার ব্যাপারে।

এই সকল নজিরবিহীন নৃশংসতার পরেও, মেটা, ইউটিউব, এক্স এবং টিকটক অথবা, টেলিগ্রামের মতো মেসেজিং অ্যাপ সহ, কোনো সামাজিক মাধ্যমই এই গণহত্যা থেকে তৈরি হওয়া ঝুঁকি হ্রাস করার জন্য প্রকাশ্যে কোন প্রচেষ্টা পরিচালনা এবং যোগাযোগ করেনি। বরং, প্রতিটি প্ল্যাটফর্মই যুদ্ধ প্রপাগান্ডা, অমানবিক বক্তব্য, গণহত্যামূলক বিবৃতি, সহিংসতার জন্য স্পষ্ট আহ্বান, বর্ণবাদী ঘৃণা বক্তব্য এবং ইসরায়েলি সৈন্যরা একঘেয়েমি থেকে মসজিদ এবং বেসামরিক বাড়িতে বোমা হামলা, চোখ বেঁধে ফিলিস্তিনি বন্দীদের নির্যাতন ও অপমান করা ও যুদ্ধাপরাধ উদযাপনের ঘটনার প্রমাণ, সবই মোবাইলের পর্দায়/স্ক্রিনে উপস্থিত/উপলব্ধ।

এই কনটেন্টগুলো যখন খুব কমই মডারেট করা হয়, তখনই ফিলিস্তিন সম্পর্কিত কনটেন্টগুলো পদ্ধতিগতভাবে এবং অসামঞ্জস্যপূর্ণভাবে সরিয়ে ফেলা হচ্ছে, এমনকি গাজার নৃশংসতার প্রমাণাদিও এর মধ্যে অন্তর্ভূক্ত। ফিলিস্তিনি আওয়াজ দমনে সিংহভাগ অংশীদারিত্ব রাখা মেটা ফিলিস্তিনি কনটেন্টের অতি-মডারেশনের সমস্যার ব্যাপারেও সম্পূর্ণরূপে সচেতন যা ২০২১ সালে তাদের পরিচালনা করা একটি মানবাধিকার তদন্ত প্রতিবেদন বর্ণনা করা হয়েছে। হিব্রু ভাষার কনটেন্ট এবং বিশেষ করে ঘৃণা বক্তব্য বিষয়ে মেটার তার নিজের দ্বিতীয় একটি সমস্যার ব্যাপারে যথাযথভাবে সচেতন, যা সে ভাষার কনটেন্টকে উল্লেখযোগ্যভাবে কম নিয়ন্ত্রণ করে, কারণ এই ধরণের কনটেন্ট সনাক্ত ও সরানোর জন্য মেটার কোনো প্রায়োগিক ঘৃণা বক্তব্য শ্রেণিবিন্যাসকারী নেই। এইসব সম্পূর্ণরূপে জানার পরেও, তাদের কনটেন্ট মডারেশন নীতি এবং এ্যাকশন ফিলিস্তিনিদের উপর যে নেতিবাচক মানবাধিকার প্রভাব ফেলেছে তা মেটা হ্রাস করতে বা তুলে ধরতে ব্যর্থ হয়েছে/মেটার কনটেন্ট মডারেশন নীতি এবং এ্যাকশন ফিলিস্তিনিদের মানবাধিকারের উপর যে নেতিবাচক প্রভাব ফেলেছে তা তারা হ্রাস করতে বা তুলে ধরতে ব্যর্থ হয়েছে।

সংঘাতময় পরিস্থিতে ব্যবসায়গুলো কখনোই নিরপেক্ষ থাকতে পারে না, এবং টেক কোম্পানিগুলোও এক্ষেত্রে ব্যতিক্রম নয়।

কিন্তু এখানে বিষয়টি কনটেন্ট মডারেশনের চেয়েও বড়। একটি কনটেন্টের বে-আইনি হওয়া এবং এটি কীভাবে নৃশংস অপরাধ সংঘটনের কাজ আরো সহজতর করছে অথবা এমন কাজে অবদান রাখছে তা নিয়ে মূল্যায়ন করা সংঘাতের পরিস্থিতিতে সামাজিক মাধ্যমগুলোর ভূমিকাকে বোঝার মাত্র একটি দিক।  যা খুব কমই মূল্যায়ন করা হয় তা হলো এই প্ল্যাটফর্মগুলো কীভাবে সংঘাতের গতিশীলতাকে প্রভাবিত করে, সহায়তা করে অথবা উত্তেজনা তৈরি করে, হোক সে মূল্যায়ন কোম্পানিগুলোর নিজেদের মাধ্যমে অথবা স্বাধীন নিরীক্ষকদের মাধ্যমে- বিশেষ করে সামরিক দখল এবং বর্ণবাদের প্রেক্ষাপটে, যেখানে দখলদার ও দখলের শিকারদের মধ্যে ক্ষমতার অসমতা ক্ষতিকারক এবং সুস্পষ্ট। উদাহরণস্বরূপ, গুগল, যে ইউটিউবে ইসরায়েলি সরকারের আক্রমণাত্মক টার্গেটেড যুদ্ধ প্রপাগান্ডা বিজ্ঞাপন থেকে আয় করছে, তারা এভাবে দেখতে পারে যে ইসরায়েলি বিজ্ঞাপনগুলো তাদের নিজস্ব মাপকাঠিতে হয়তো গুগলের কনটেন্ট পলিসি ভঙ্গ করছে না। কিন্তু সব মিলিয়ে, যে প্রেক্ষাপটে বিজ্ঞাপনগুলো অনুমোদন পাচ্ছে, এর মাধ্যমে কোম্পানিগুলো গাজায় চলমান গণহত্যার পক্ষে সাফাই গেয়ে আন্তর্জাতিকভাবে বয়ান প্রচার ও গঠনের জন্য আন্তর্জাতিক আইন লঙ্ঘনের অস্বস্তিকর প্রমাণ থাকা একটি পারমাণবিক ক্ষমতাধরকে একটি প্ল্যাটফর্ম ও প্রভাব রাখার জায়গা করে দিচ্ছে।

সংঘাতময় পরিস্থিতে ব্যবসায়গুলো কখনোই নিরপেক্ষ থাকতে পারে না, এবং টেক কোম্পানিগুলোও এক্ষেত্রে ব্যতিক্রম নয়।  কোন কাজ করা অথবা না করা, উভয়ের মাধ্যমেই তারা দ্বন্দ্বের পরিস্থিতিকে উসকানি দেয় তার প্রমাণ মিয়ানমার এবং ইথিওপিয়ার ঘটনায় দেখা যায়। একদম একইভাবে, তারা দীর্ঘদিন যাবৎ ইসরায়েলি দখলদারিত্ব এবং সহিংসতার ব্যাপারে চোখ বুজে থেকেছে, অনলাইন ও অফলাইনে, এবং ফিলিস্তিনিদের অধিকারকে ক্ষ্মুণ্ণ করেছে। গাজায় চলমান গণহত্যা তাদের প্ল্যাটফর্মে সরাসরি সম্প্রচারিত হওয়া সত্ত্বেও কোম্পানিগুলো তাদের দায়িত্ব পালনে ব্যর্থ হচ্ছে, এটি একটি স্পষ্টত নৈতিক ও আইনি ব্যর্থতা। আইসিজের এই মামলায় তাদের সকলের ঘুম ভাঙা উচিত। 

মারওয়া ফাতাফতা অ্যাক্সেস নাও-এর মধ্যপ্রাচ্য এবং উত্তর আফ্রিকার পলিসি ম্যানেজার। ফিলিস্তিনে চলমান ডিজিটাল দখলদারি নিয়ে ব্যাপকভাবে লেখালেখি করেছেন। তার লেখালেখিতে প্রাধান্য পায় সশস্ত্র সংঘাত এবং মানবিক প্রেক্ষাপটে নতুন প্রযুক্তির ভূমিকা ও ঐতিহাসিকভাবে প্রান্তিক ও নিপীড়িত জনগোষ্ঠীর উপর প্রভাব। অ্যাসোসিয়েশন ফর প্রোগ্রেসিভ কমিউনিকেশনস-এ প্রকাশিত এই লেখাটি একটিভেট রাইটসের জন্য অনুবাদ করেছেন আবরার ইফাজ।

প্রাসঙ্গিক লেখা

Activate Rights. All rights reserved.

internet rights are human rights