ছবি: করিম আব্দুল্লাহ, AFP

ইন্টারনেট ও দক্ষিণ এশিয়ার রাজনীতি

আলতাফ পারভেজের সাক্ষাতকার

১। বাংলাদেশসহ পুরো দক্ষিণ এশিয়ার গণতন্ত্র ও রাজনীতিতে ইন্টারনেটের ভূমিকা কীরকম?

ইন্টারনেট ক্রমে প্রভাবশালী এক ভূমিকা  নিচ্ছে এ অঞ্চলে। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমগুলো জনগণকে মতামত প্রকাশের সুযোগ করে দিয়ে গণতন্ত্রচর্চার প্রসার বাড়িয়েছে। এতে রাজনীতিবিদরা জনগণের আবেগ, অনুভূতি –মতামতের প্রতি আগের চেয়ে বেশি সতর্ক। তবে কতৃর্ত্ববাদী শাসকরাও বসে নেই। নানান আইন করে ইন্টারনেটে জনগণের স্বাধীন মতামতের প্রকাশ বন্ধ করতে তারা তৎপর আছে। হোয়াট অ্যাপ, ফেসবুক ও টুইটারে ভিন্নমতের দিকে নজররাখার কাজে রাষ্ট্রের বিপুল অর্থ খরচ করে স্বৈরশাসকরা। সে অর্থ আবার জনগণ থেকেই কর হিসেবে নেয়! বিভিন্ন ধরনের আইন করে ইন্টারনেটভিত্তি স্বাধীন মতামত নিয়ন্ত্রণেরও চেষ্টা আছে।

২। জাতিসংঘের ভাষ্যমতে ইন্টারনেট ব্যবিহারের সুযোগও অধিকার৷ কিন্তু দক্ষিণ এশিয়ায় এই অধিকার মানা হচ্ছে না। দক্ষিন এশিয়ার বাস্তবতায় ইন্টারনেটকে এত ভয় পায় কেন সরকারগুলো? এর সাথে কর্তৃত্ববাদের বৃদ্ধির কোন সম্পর্ক আছে, তা কী?

দক্ষিণ এশিয়ায় প্রথাগত রাজনীতি দখল করে আছে মূলত কিছু পরিবার এবং ব্যবসায়ী  সমাজ। এরা গণতন্ত্রের মিত্র নয়। গণতন্ত্রের যেকোন ব্যাপকভন্ত্রের যেকোন ব্যাপকভিত্তিক চর্চায় এরা রাজনীতির নিয়ন্ত্রণ হারাবে। ফলে ইন্টারনেট ও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম নিয়ে এসব শক্তি উদ্বিগ্ন। জনগণ যত বেশি তথ্য জানবে, তত কম মানবে–এরকম একটা ভীতি আছে এলিটদের মাঝে। ইন্টারনেটের ব্যবহারে আমলাতন্ত্রও উদ্বিগ্ন। ইন্টারনেটের ব্যবহার তাদের জমিদারী কিছুটা খর্ব করে। রাজনীতিবিদ ও আমলাদের মাঝে ইন্টারনেটে গণতন্ত্রচর্চা বন্ধে একমত না হওয়ার কারণ নেই। উপনিবেশিক আদলে দেশ নিয়ন্ত্রন করতে স্বাধীন ইন্টারনেট এদের জন্য সমস্যা।

৩. দক্ষিন এশিয়ার বিভিন্ন অঞ্চলে এরকম ন্যায্য দাবি আদায়ে আন্দোলন কিংবা উত্তেজনায় ইন্টারনেট বন্ধ বা স্লো বা একাউন্ট সাপ্রেস করার দু-তিনটি ঘটনা আপনার কাছে জানতে চাই।

গত বছর বার্মায় প্রায়ই এরকম ঘটেছে এবং ঘটছে।  একাউন্ট বন্ধ করে দেয়ার ঘটনা এ অঞ্চলে প্রায় প্রত্যেক দেশে ঘটেছে এবং ঘটছে। একাউন্টের বিস্তারিতকে মামলার উপাদান করে তোলার ঘটনাও অনেক। দিন তারিখ ধরে ঘটনাবলীর বিবরণ দিতে হলে আমাকে সময় দিতে হবে।

৪. বাংলাদেশেও রোহিঙ্গা ক্যাম্পে ইন্টারনেট বন্ধ করার ঘটনা দেখেছি। এছাড়াও একাধিক ঘটনা আছে। এ ধরনের ঘটনাগুলোর পেছনে কি কি কারন থাকতে পারে?

রোহিঙ্গা ক্যাম্পগুলোতে দেশ ছেড়ে পালিয়ে আসা মানুষদের মাঝে কিছু সন্ত্রাসীও আছে। অবৈধ কাজকারবারের সংগে যুক্ত কিছু মানুষও আছে এখানে। আবার রোহিঙ্গা তরুণদের মাঝে অবৈধভাবে সাগরপথে বিদেশ যাওয়ার প্রবণতাও আছে। সেটা আবার অস্বাভাবিকও নয়। এসব কারণে হয়তো এখানে ইন্টারনেট নিয়ন্ত্রণ করা হয়। তবে তাতে ইতিবাচক কোন অগ্রগতি ঘটেছে কি না সেটা তৃতীয়পক্ষ দ্বারা পরীক্ষিত নয়।

৫. ইন্টারনেট বন্ধ করে আদৌ কি কোনো উত্তেজনা-সংকট নিয়ন্ত্রনে আনা যায়?

তাৎক্ষণিক উত্তেজনা কমাতে এরকম নিয়ন্ত্রণ কাজে আসে বটে, তবে দীর্ঘমেয়াদে এটা স্থায়ী কোন সমাধান হতে পারে না। যে কোন উত্তেজনার পেছনে থাকে সুনির্দিষ্ট সামাজিক কারণ। সেটার যৌক্তিক সমাধান হলে ইন্টারনেটে হাত দিয়ে কিছু হয় না। ইন্টারনেট নিয়ন্ত্রণ মানে মানুষের জানার অধিকারে হস্তক্ষেপ।

লেখক

সাংবাদিক ও রাজনৈতিক ব্যঙ্গাত্মক

প্রাসঙ্গিক লেখা

Activate Rights. All rights reserved.