গণতন্ত্র ও ইন্টারনেট স্বাধীনতা

বিপুল সংখ্যাক মানুষ আমাদের দেশে ইন্টারনেট ব্যবহার করে৷ বলা হয় আমরা ডিজিটাল যুগে বসবাস করছি৷  কিন্তু এখানকার ডিজিটাল পরিসরে কি মানুষ বান্ধব হতে পারছে?

বাংলাদেশে ইন্টারনেট ব্যবহার প্রান্তিক পর্যায়ে পৌছেছে মূলত বাজার অর্থনীতির চাহিদা ও যোগানের শর্ত মেনে। যেহেতু বাংলাদেশে জনসংখ্যার ঘনত্ব বেশি, দেশের বিভিন্ন প্রান্তে টেলিযোগাযোগ ও ইন্টারনেট সম্প্রসারণে বিনিয়োগ করতে কেউ পিছপা হয়নি। কিন্তু সমস্যাটা রয়ে যায় একেবারে প্রান্তিক এলাকায় — যেখানে মুনাফার সম্ভাবনা কম, মানুষের সামর্থ্যও কম — সেখানে সরকারি ইন্টারভেনশন ছাড়া গতি নেই। সরকারিভাবে ইউনিয়ন পরিষদে উচ্চগতির ইন্টারনেট সেবা আছে; কিন্তু গ্রাহক পর্যায়ে সেই সেবা পৌছাতে এখনও বাকি। সেবার মানেও অঞ্চলভেদে তারতম্য থাকে আকাশপাতাল। শহরাঞ্চল ও প্রান্তিক অঞ্চলের ইন্টারনেট দুনিয়ায় পার্থক্য তাই এখনও বেশ প্রবল।

সাংবাদিকতায় আপনি লম্বা সময় কাটিয়েছেন৷ প্রান্তিক পরিসরকে দেখেছেন৷ বাংলাদেশের বাস্তবতায় ইন্টারনেটে দুনিয়ায় এই প্রান্তিকতা আর শহুরে সমাজের কি কোনো পার্থক্যে আছে? 

বাংলাদেশে ডিজিটাল অধিকারের ধারণাই বিভিন্ন স্টেকহোল্ডারের কাছে স্পষ্ট নয়। বিদেশী যেসব কোম্পানি বাংলাদেশে অপারেট করে, তাদের কাছ থেকে স্বচ্ছতা ও ব্যবসায়িক ইন্টেগ্রেটি নিশ্চিত করতে আমাদের দরকার ছিল সোচ্চার সুশীল সমাজ। কিন্তু দু:খজনক হলো আমাদের সুশীল সমাজ এই ডিজিটাল অ্যাক্টিভিজমে অত্যন্ত পশ্চাদপদ। তাই কোম্পানিগুলো নিসঙ্কোচে সরকারের হুকুম তামিল করে যেতে পারছে।

নিরবচ্ছিন্ন ইন্টারনেট একটি অধিকার৷ এই অধিকার চর্চাকে নিশ্চিত করতে রাষ্ট্রের যেমন দায় আছে দায় তো টেলিকম কোম্পানিদেরও আছে৷ এসব দায় কি ঠিকঠাক পালন করা হচ্ছে?

ইন্টারনেট সেবা এখন মৌলিক অধিকার হিসেবে বিবেচিত হয়। এই ধরণের যেকোনো অধিকারের অবস্থান ‘কনভেনিয়েন্স’-এর উর্ধ্বে। গুজব প্রতিরোধের ঠুনকো দোহাই দিয়ে যখন ইন্টারনেট বন্ধ করা হয়, তখন রাষ্ট্র তার নিজের ব্যর্থতার দিকে নিজেই চোখে আঙ্গুল দিয়ে দেখিয়ে দেয়। আর রাজনৈতিক মিছিল, সভাসমাবেশ বা প্রতিবাদের সময় ইন্টারনেট বন্ধ করে রাখা অসাংবিধানিক, বেআইনি ও আন্তর্জাতিক আইন-সংবিধির লঙ্ঘণ।

ডিজিটালাইজেশনের ধারনাকে কেন্দ্র করে অনেক সময় নজরদারিকে বৈধতা দেয়া হয়। আবার বিনা কারনে আবার ইন্টারনেট বন্ধের ঘটাও মরা দেখি৷ এখানে সমস্যাটি কোথায়?

অতীতের যেকোনো সময়ের চেয়ে বাংলাদেশে ইন্টারনেট বা ডিজিটাল মাধ্যমে গণ-নজরদারি বেড়েছে। এবং এই মাত্রা অত্যন্ত ডিসপ্রোপোর্শনেট: বাংলাদেশের জনগণ যেই ডিজিটাল অবকাঠামো ভোগ করে, তার মান বৈশ্বিক মানদণ্ডে তলানির দিকে। কিন্তু বাংলাদেশের জনগণের উপর নজরদারি করার জন্য সর্বোচ্চ মাত্রার টুল ও অস্ত্র সরকারের কাছে আছে। এবং এসব টুলের প্রয়োগে কোনো স্বচ্ছতা তো দূরে থাক, কোনো অভ্যন্তরীণ জবাবদিহিতাও নেই।

সাংবাদিকতার পরিসরে এখনো ইন্টারনেট সুবিধাকে অধিকার নয় বরং প্রিভিলেজ হিসাবে দেখা হয়৷ এই ধারনাটি কি সঠিক?

ইন্টারনেটে প্রবেশাধিকার অবশ্যই নাগরিকের অধিকার। ইন্টারনেটে নিম্নআয়ের বা অন্যান্য প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর প্রবেশাধিকার এখনও সুষম হয়নি। এই খাতকে শুধু বাজার-অর্থনীতি উদ্ভুত একটি পণ্য বা প্রিভিলেজ হিসেবে বিবেচনা করাও মানুষের অধিকার নিশ্চিতের পথে অন্তরায়।

সাক্ষাৎকার

পরিচয় অমুক তমুক

প্রাসঙ্গিক লেখা

Activate Rights. All rights reserved.

internet rights are human rights